ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার বনাঞ্চল বিরান ভূমিতে পরিণত বন্য প্রাণির অস্তিত্ব নেই!

এম.আর মাহমুদ ::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিশাল বনভূমি কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এক সময়ের চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ আর নেই বললেই চলে। আছে শুধু বৃক্ষ শূণ্য ন্যাড়া পাহাড়। হালে বন ও ভূমি দস্যুদের রাহুগ্রাস থেকে নিস্তার পাচ্ছেনা ন্যাড়া বনভূমি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গড়ে উঠছে বেশুমার বসতবাড়ি। বনাঞ্চলে পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় ও ব্যাপক জনবসতি গড়ে উঠায় বনে বসবাসরত শত প্রজাতির বন্যা প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের দুটি, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের ৩টি, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের ১টিসহ মোট ১১টি বনবিটের অধীনে প্রায় ৪৩ হাজার একর বনভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ও সৃজিত বৃক্ষে ছিল পরিপূর্ণ। এসব নান্দনিক বনরাজিতে পরিপূর্ণ চকরিয়া ছিল যেন সৌন্দর্য্যরে অপূর্ব লীলাভূমি। বনাঞ্চলের গর্জন, চাপালিস, তেলসুর, চাম্পাফুল, জাম, গামারী, বৈলামসহ সৃজিত সেগুন প্রজাতির বৃক্ষ। এছাড়া হরেক প্রজাতির বাঁশ, বেতসহ লতা-পাতার সমারোহ। বর্তমানে বৃক্ষশূণ্য পাহাড়গুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশিরভাগ বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে কিছু গাছ দেখা গেলেও বনের ভিতরের দৃশ্য বড়ই বেদনাদায়ক। বৃক্ষশূণ্য পাহাড় গুলো দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অসংখ্য পাড়ায় পরিণত হয়েছে পাহাড়ী জনপদ। ভূমিদস্যুরা বিনাবাধায় বিক্রী করছে পাহাড়ী বনভূমি। আবার অনেকেই ইচ্ছামত পাহাড় নিদন করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। বনবিভাগ এক সময় বন রক্ষায় সচেষ্ট থাকলেও বর্তমানে সে উদ্দেশ্য বনকর্মীদের নেই বলা চলে। পাহাড়ে থাকা গাছগুলো প্রভাবশালী বনদস্যুরা লুট করে নিয়ে গেলে আদালতে মামলা দায়ের করে চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে। বন মামলায় এমন ব্যক্তিদেরকেও আসামী করা হয় যারা জীবনে জঙ্গলে যাইনি। মূলত বনকর্মীরা তাদের দায়িত্ব অবহেলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসব মামলা আদালতে দায়ের করে কর্মস্থল ত্যাগের আগে।

প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বনে আজ থেকে তিন যুগ আগে শত প্রজাতির বন্যপ্রাণি থাকলেও বর্তমানে ৭/৮টি হাতির পাল ছাড়া অন্যসব বন্যপ্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা চলে। বিশেষ করে হরিণ, বন মোরগ ও শিয়ালের চিৎকার আর শোনা যায় না সকাল ও গভীর রাতে। ইতিমধ্যে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি দখলজনিত কারণে নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্ত হতে চলছে চিতাবাঘ, লামচিতা, হনুমান, উল্টো লেজু হনুমান, মুখ পোড়া হনুমান, বন বিড়াল, বানর, বন গরু (গয়াল), বন্য কুকুর (রাম কুকুর), সজারু, বন্য শুকর, ভাল্লুক সহ অসংখ্য প্রাণী।

সরকার বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য যতই পদক্ষেপ গ্রহণ করুকনা কেন কোন ভাবেই বনাঞ্চল রক্ষা করা যাচ্ছেনা। সম্প্রতি সরকারী অর্থে ন্যাড়া পাহাড়ে অংশীদারিত্ব বনায়নের মাধ্যমে বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়ে বনায়ন করলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব বাগানও বনদস্যুদের তান্ডব থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। বনবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অভিমত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের দাপটে তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা। ফলে নিত্যদিনই বনভূমি জবর দখল ও মূল্যবান গাছপালাও লুট হচ্ছে।

এছাড়া বিশাল বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণে বন বিভাগের জনবল সংকটও রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধভাবে ইট ভাটা স্থাপন করে নির্বিচারে জালানী কাঠ ব্যবহার করায় বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। অপরদিকে তামাক চাষের আগ্রাসনের কারণে বনের হরেক প্রজাতীর বৃক্ষ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে চকরিয়ার বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়ার বনাঞ্চলের শতবর্ষী গর্জন গাছগুলো নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে। এক্ষেত্রে বনকর্মীদের ভূমিকা অনেকটা রহস্যজনক। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বিরান ভূমি হয়ে পড়বে।

মাহমুদুর রহমান মাহমুদ

পাঠকের মতামত: